ভারত কখনো যুদ্ধ চাইলে বাংলাদেশের কৌশল কী হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্চের গরম দুপুরে কাঁঠাল পাকছে, আর তীব্র রোদের তাপে দেওাল ধরে জমে থাকা বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। রাতের কুমোটতা বাড়ছে, কিন্তু গরমের কোন কমতি নেই। সীমান্তের টহলরত সেনাদের ক্লান্ত চোখেও সতর্কতার ছাপ। ওপারে ভারী বুটের আওয়াজ ও গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন শোনা যাচ্ছে, সঙ্গে দূর থেকে কুকুরের ডাক। সব মিলিয়ে অদৃশ্য এক চাপ যেন পুরো সীমান্তকে চেপে ধরেছে। ভারতীয় বিএসএফ-এর নতুন ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে, ভারী অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত। উত্তেজনা বাড়ছে, আর এক হঠাৎ প্রশ্ন এসে দাঁড়াচ্ছে— বাংলাদেশ কি বুঝতে পারছে ভারত আসলে কী চাইছে?
বিশ্লেষকরা বলেন, ভারতের আসল উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না বাংলাদেশকে প্রকৃত স্বাধীনতা দেওয়া। ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, তবে তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে না, বরং তাদের করদ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। ভারতের মূল লক্ষ্য ছিল নিজেদের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা রাখা, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ছিল সেই করিডোর মাত্র, যার মাধ্যমে ভারত তাদের সাতটি রাজ্য— নাগাল্যান্ড, মণিপুর, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও অরুণাচল প্রদেশ— সংযুক্ত রাখতে চেয়েছিল।
ভারত কখনোই চায়নি বাংলাদেশ সামরিকভাবে শক্তিশালী হোক। তারা চায় বাংলাদেশের উপর তাদের নির্ভরশীলতা বজায় থাকুক, যেন কখনো ভারতবিরোধী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। তবে, সময় বদলাচ্ছে। বাংলাদেশ বুঝতে শিখছে স্বাধীনতার আসল অর্থ। বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারতের সীমান্ত, আর দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার। অন্যদিকে ভারতের সেনা সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ, সঙ্গে আধুনিক যুদ্ধবিমান, ট্যাংক এবং মিসাইল সিস্টেম রয়েছে। তাহলে, প্রশ্ন ওঠে— বাংলাদেশ কি আদৌ টিকে থাকতে পারবে?
এমন পরিস্থিতিতে, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টা করে, তবে ভারত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। ৫০০ যুদ্ধবিমান থাকলে, বাংলাদেশ কি ৫৫০টি ফাইটার জেট কিনবে? এমন কিছু বাস্তবসম্মত নয়। বরং বাংলাদেশকে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে বিনিয়োগ করতে হবে। যুদ্ধ কেবল আক্রমণের উপর নির্ভর করে না, প্রতিরক্ষা সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের বিখ্যাত সমরবিদ সাঞ্জু বলেছিলেন, "যদি কোন দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী হয়, সেখানে আক্রমণ করো না।" প্রাচীনকালে রাজ্যগুলো শহরের চারপাশে বিশাল প্রাচীর তৈরি করতো, আর আধুনিক যুদ্ধবিজ্ঞানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেই প্রাচীরের কাজ করে।
বাংলাদেশ যদি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে, তবে ভারত সহজে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না। ভারত ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করেছে, তবে বাংলাদেশ কি একই পথে হাঁটবে? বাংলাদেশ কখনোই ভারত আক্রমণ করতে যাবে না, বরং দেশটি নিজের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করবে। তাই, বাংলাদেশকে ৫০০টি যুদ্ধবিমান কেনার বদলে রাশিয়ার এস-৪০০ অথবা ইসরাইলের আয়রন ডোমের মতো আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে হবে। এস-৪০০ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলোর একটি, যা শত্রুর যুদ্ধবিমান এবং মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করতে পারে।
এছাড়া, শুধু আকাশ প্রতিরক্ষা নয়, স্থল ও জলসীমাতেও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ভারতের কাছে প্রচুর ট্যাংক থাকলেও, বাংলাদেশকে ভারী ট্যাংক কেনার প্রয়োজন নেই। তার বদলে, এন্টি ট্যাংক মিসাইল এবং ড্রোন-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশাল বাহিনী থাকলেও, বাংলাদেশের দরকার আধুনিক নৌ মিসাইল সিস্টেম, যা উপকূলীয় অঞ্চলে বসানো হলে ভারতীয় নৌবাহিনী সহজেই বাংলাদেশের জলসীমা লঙ্ঘন করতে পারবে না।
যদি বাংলাদেশ সামরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে ভারতের একক আধিপত্য আর থাকবে না। এজন্য ভারত চায় বাংলাদেশ কখনোই সামরিক শক্তি অর্জন করতে না পারে। ভারতের প্রভাব শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষাব্যবস্থায়ও প্রবেশ করেছে। বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশকে ইনোভেশন থেকে দূরে রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে, যেন চিন্তাশক্তি কমিয়ে চাকরির জন্য ভারতীয় কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল করা যায়। ভারত বাংলাদেশে "মেড ইন ইন্ডিয়া" পণ্যের আধিপত্য সৃষ্টি করেছে, কিন্তু যদি বাংলাদেশ সামরিক খাতে প্রযুক্তির উন্নয়ন না করে, তবে ভবিষ্যতে আরও বিপদ বাড়বে। চীন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এফ-১৭ যুদ্ধবিমান ভারতীয় তেজসের চেয়ে উন্নত, এবং বাংলাদেশ কি এই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবে?
যুদ্ধ কেবল গোলাগুলি নয়, এটি প্রতিরোধও। ভারতের আগ্রাসন ঠেকাতে বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রেডিমেড অস্ত্র কেনার বদলে, নিজের প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলতে হবে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা একমত, যে বাংলাদেশ যদি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলে, তাহলে ভারত বা অন্য কোন প্রতিপক্ষ সহজে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে দুটি পথ রয়েছে— এক, ভারতের ছায়ায় থেকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে থাকা, আর দুই, নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তি গড়ে তোলা।
মার্চের রাত, ঘামাচি ধরা বাতাসে অস্বস্তি বাড়ছে। দূর থেকে শোনা যায় বিমানের শব্দ, ঢাকার রাস্তায় সেনাদের গাড়ি টহল দিচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘরগুলোতে বাতি এখনও জ্বলছে, পরিকল্পনা চলছে, হিসাব-নিকাশ চলছে। একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে— হয় ইতিহাসের পাতায় পরাধীনতার গল্প লিখতে হবে, নয়তো প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করে স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ কি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে?
বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকায় কি ঝিরঝিরে বাতাস বইবে, উড়তে থাকবে?
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- অবশেষে ৫ বছর পর আরব আমিরাতের ভিসা নিয়ে সুখবর
- আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা চালু
- বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবেন সাকিব
- মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে শেখ হাসিনার গোপন বৈঠকে: যা জানা গেল
- যদি ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা ধূলিস্যাৎ না হতো, তবে ৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম কেমন হতো
- ৪০ বছর পর বিশাল বড় সুখবর পেলেন শিক্ষকরা
- ১ শর্তের বিনিময়ে আইপিএলে খেলতে পারেন মুস্তাফিজ
- ইতালির ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে এলো সুখবর, আগামী মাস থেকে আবেদন শুরু
- দুবাইয়ে দুর্ঘটনায় সংগীত শিল্পী মমতাজ নিহত, সত্যতা নিয়ে যা জানা গেল
- ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু: আসল সত্যতা প্রকাশ
- ওবায়দুল কাদেরের মোবাইল ট্র্যাকিং: শেষ লোকেশন মোহাম্মদপুর
- অধিবেশন চলাকালে সার্বিয়ার পার্লামেন্টে গ্রেনেড হামলা
- ১০ কোটি টাকা ও এমপি পদের প্রলোভন দেখিয়ে এনসিপিতে নুরর দলের ২০ নেতা: যা জানা গেল
- নায়িকা মেঘলার বাসায় লুকিয়ে নায়িকাকেই সরিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের!
- কমে গেল ডলারের বিনিময় হার (০৫ মার্চ)