বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, এমন খবর ঘিরে সম্প্রতি আলোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। এর পর থেকে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, including সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, এখনো আত্মগোপনে আছেন এবং বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ এবং দলের শীর্ষ নেতাদের বিপদে ফেলার বিষয়টি দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত খুবই হতাশাজনকভাবে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগে একাধিকবার বিপ্লবের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি এবং দৃঢ় মনোভাবের কারণে আওয়ামী লীগ গভীর সংকটে পড়েছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে চরম হতাশা এবং বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। দলের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি অনুকূলে নেই।

এ পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উদারপন্থী অংশ মনে করছেন যে, দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন অনিবার্য। তবে, শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, এমনটাই জানিয়েছে শেখ পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র।

এদিকে, সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার একমাত্র ছেলে, ৫ আগস্টের পর জানিয়েছিলেন যে, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। তবে তিনি তার বক্তব্য পরবর্তীতে পরিবর্তন করেছেন। এর পাশাপাশি, শেখ হাসিনার অতীত কর্মকাণ্ড, যেমন গুম-খুন, হত্যাসহ একাধিক বিতর্কিত ঘটনায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে তিনি এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং দলের নেতারা মনে করছেন যে, বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন সম্ভব নয়। শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, "শেখ হাসিনাকে দিয়ে আর রাজনীতি সম্ভব নয়।" একইভাবে, সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনও আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের জন্য নতুন নেতৃত্বের কথা বলেছেন।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর দলের পুনর্গঠন নিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা চলছে। পুরনো এবং নতুন নেতাদের নিয়ে দল পুনর্গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উঠে এসেছে। এই আলোচনায় নাম রয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. হাছান মাহমুদ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের।

এদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, যিনি একটি ক্লিন ইমেজের জন্য পরিচিত, তার নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে, তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তিনি রাজনীতিতে ফিরতে চান না। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, "এই পচা, নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আর ফিরতে চাই না।"

বিশ্বস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি নয়া দিগন্তে মন্তব্য করেছেন, "আওয়ামী লীগ এখন মৃতপ্রায়। যে গণরোষ তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ২০ বছরেও দলটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলে মনে হয় না।" তার মতে, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের ভবিষ্যৎ খুব একটা সাফল্যমন্ডিত হতে পারে না। তবে, তারা যদি কিছুটা ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে দলের পুনর্গঠন করেন, তবে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।

এখন দেখার বিষয়, আগামীতে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং পুনর্গঠন কেমন আকার নেবে এবং দলের ভবিষ্যত কী হবে।