ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, তার প্রশাসনের নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক বিভিন্ন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যেমন তার কিছু নীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন এসেছিল, তেমনি দ্বিতীয় মেয়াদে তার কিছু পরিকল্পনা এবং আগের নীতির ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করবে।

১. চীন

ট্রাম্পের প্রশাসন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় মেয়াদে, চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা আরও বাড়বে এবং দক্ষিণ চীন সাগরসহ অন্যান্য ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং হুয়াওয়ে ইস্যু আরও তীব্র হতে পারে।

২. ইরান

ট্রাম্পের প্রথম ম্যান্ডেটের সময় ২০১৮ সালে তিনি ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন, এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতি ইরানের অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৩. মেক্সিকো

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হয়েছিল, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (NAFTA) বাতিল করে ইউএসএমেকা (USMCA) নামে নতুন একটি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, যদি সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে আরো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে।

৪. ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছিল। ট্রাম্পের উগ্র বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে ইউরোপীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ এবং ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর থেকে বেশি অর্থ চাওয়া, তাদের সাথে সম্পর্কের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে এসব পদক্ষেপ আরও তীব্র হতে পারে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে।

৫. ক্যানাডা

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্যানাডার ওপরও বাণিজ্যিক চাপ বাড়তে পারে, বিশেষ করে মেক্সিকোর সাথে কিপর্যন্তে নির্ধারিত মার্কিন-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (USMCA) শর্তাবলীর বিষয়ে যদি বিরোধ তৈরি হয়। বিশেষত, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ক্যানাডা আরো বেশি মার্কিন চাপের সম্মুখীন হতে পারে।

৬. ভারত

ভারতে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা জটিল ছিল, বিশেষ করে কৃষি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। যদিও তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন, তবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে যদি বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর কড়া মনোভাব বজায় রাখা হয়, তাহলে ভারতের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

৭. রাশিয়া

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক কিছুটা মিশ্রিত ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি তার প্রশাসন রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা বা আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা সেদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরো সংকটাপন্ন করতে পারে। বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যু এবং সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে।

৮ বাংলাদেশ

এছাড়া এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করছেন অনেকেই। এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে সেন্টমাটিন্ট দ্বিপে ঘাটি করতে চাইবে ট্রাম্পের প্রশাসন। সেখানে বাংলাদেশ বাধা হয়ে দাড়াবে যা ট্রাম্প ভাল ভাবে নিবে না।

সার্বিকভাবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চিত্র আরও পরিবর্তিত হতে পারে। যেসব দেশ তার নীতির সঙ্গে একমত নয় বা তার বৈশ্বিক শক্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, এবং পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে।