| ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মেসি নয় রোনালদোই ইউরোপে সর্বকালের সেরা

খেলাধুলা ডেস্ক . বিনোদন৬৯.কম
২০২৪ সেপ্টেম্বর ০১ ০৭:৪৭:৪১
মেসি নয় রোনালদোই ইউরোপে সর্বকালের সেরা

কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে পর্তুগালের হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারলেন না। লুকানোর চেষ্টাও করেননি। রোনালদোর কান্না- এই দৃশ্য হয়তো এখনো তীরের মতো বিঁধবে ভক্তদের হৃদয়ে। সেদিনের পর রোনালদোর কান্না স্থায়ী হয়ে গেল। আল-নাসর জার্সিতে শিরোপা হারানোর পর, ইউরোতে পেনাল্টি কিক মিস করায় তিনি কেঁদেছিলেন।

কয়েকদিন আগে রোনালদো যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিশেষ পুরস্কার পান, তখনও সবার চোখ ছিল রোনালদোর দিকে। তবে এদিন কাঁদেননি সিআর সেভেন। কখনো সে হাসত, আবার কখনো তার চোখে একটু বিভ্রান্তি ছিল। কে জানে, হয়তো উয়েফার দেওয়া এই পুরস্কারই রোনালদোর বুক থেকে একটা বিশাল পাথর সরিয়ে দিয়েছে। এটি ইউরোপে রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ জিতে লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা বিতর্কে রোনালদোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। সর্বকালের সেরা প্রশ্নে অনেকেই মেসিকে রোনালদোর চেয়ে এগিয়ে দিতে শুরু করেছেন। এমনকি ডিয়েগো ম্যারাডোনা এবং পেলে মেসির সাথে এই বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, সেই সময়ে রোনালদো পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু অনেক রোনালদো ভক্ত তাদের মতামতে অনড় থাকেন। তারাও পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছে। ফলে সেরাদের সেরার প্রশ্ন নিয়ে এখনও চলছে নানা বিতর্ক। যাইহোক, এটা বলা যেতে পারে যে এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তিন লাতিন আমেরিকান প্রভুর অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।

শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটি যদি ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের মধ্যে হয়, তবে রোনালদোর সঙ্গে অন্যদের দ্বৈরথ অনেকটাই অসম হয়ে পড়বে। চ্যাম্পিয়নস লিগে অবদান রাখার জন্য রোনালদোর পাওয়া বিশেষ স্বীকৃতিকে ভুলে থাকলেও, রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বে খাদ মেশানো কঠিন। বিশেষ করে মাপকাঠি যদি হয় পরিসংখ্যান ও সাফল্যের। তবে রোনালদোকেই দিতে হবে ইউরোপিয়ান ফুটবলের তারকাপুঞ্জের রাজার স্বীকৃতিটা।

এ বছরের মে মাসেই ইউরোপের সর্বকালের ১০০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করে বিখ্যাত ফুটবল সাময়িকী ফোরফোরটু। তাদের তালিকাতেও সবার ওপরে জায়গা পেয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই তালিকায় রোনালদোর পরের নামগুলো ইয়োহান ক্রুইফ, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জিনেদিন জিদান, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ববি চার্লটন, গার্ড মুলার, পাওলো মালদিনি, জাভি ও মিশেল প্লাতিনি।

বিশ্ব ফুটবলে ক্রুইফ অবিসংবাদিত এক নাম। সম্ভবত ফুটবল মাঠে শীর্ষ তারকাদের সামগ্রিক প্রভাবকে বিবেচনায় নিলে, ক্রুইফ বাকিদের চেয়ে যোজন দূরত্বে এগিয়ে থাকবেন। কোচ রাইনাস মিশেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘টোটাল ফুটবল’ নামের যুগান্তকারী এক তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ক্রুইফ। শুরুতে ডাচ ক্লাব আয়াক্সে এই কৌশলের প্রবর্তন করেন তাঁরা। পরে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে মিশেল-ক্রুইফ যুগলবন্দীতে এই কৌশলে খেলে সবাইকে চমকে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এমনকি পরবর্তী সময়ে আধুনিক ফুটবলের অনেক কিছুই এই টোটাল ফুটবল থেকেই ধার করা।

টোটাল ফুটবলের এই তত্ত্বকে ব্যবহার করে ক্লাব ফুটবলে অসামান্য সাফল্য পেয়েছেন ক্রুইফ। আয়াক্সের হয়ে একাধিক লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি জিতেছেন ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের টানা তিন শিরোপাও। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে চার বছরের মধ্যে তিনবার ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন ক্রুইফ। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে সেই সাফল্যের অনুবাদ করতে পারেননি এই ডাচম্যান। নেদারল্যান্ডসের হয়ে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়া এবং ১৯৭৬ সালের ইউরোতে তৃতীয় হওয়ায় তাঁর সর্বোচ্চ অর্জন। পাশাপাশি খেলার ধরন ও পজিশনের কারণেও রোনালদোর মতো গোলবন্যায় ভাসাতে পারেননি প্রতিপক্ষকে। আর এই পার্থক্যটুকুই মূলত এগিয়ে দিয়েছে রোনালদোকে।

এই যাত্রায় রোনালদোর পরিসংখ্যানের দিকে ফিরে তাকানো যাক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের হয়ে রোনালদোর লিগ শিরোপা ৭টি। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন ৫ বার। যার মধ্যে টানা জিতেছেন ৩ বার। ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ ব্যালন ডি’অরের পাশাপাশি উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সর্বোচ্চ তিনবার। এ ছাড়া ২০১৬ সালে জাতীয় দল পর্তুগালের হয়ে ইউরো এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমে জিতেছেন নেশনস লিগের শিরোপা। এসব অর্জনেও যদি রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ দূর না হয়, তবে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যেতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (১৮৩), সবচেয়ে বেশি গোল (১৪০), সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তা (৪২), এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (১৭), নকআউটে সবচেয়ে বেশি গোল (৬৭) এবং এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকসহ (৩) অসংখ্য রেকর্ড এই মুহূর্তে রোনালদোর দখলে আছে। এই সব পরিসংখ্যানের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদে নিজের সেরা সময়ে রোনালদোর প্রভাবকেও বিবেচনায় নেওয়া যেতে। সে সঙ্গে মনে রাখা উচিত, ইউরোপে রোনালদো প্রায় দুই দশক ধরে পাল্লা দিয়েছেন লিওনেল মেসির সঙ্গে।

এমনকি ইউরোপিয়ান মঞ্চে অনেক ক্ষেত্রে মেসিকে রোনালদোর পেছনেই থাকতে হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে রোনালদোর সেরা হয়ে ওঠার যে সংগ্রাম, সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। এখন ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগে মেসি ও রোনালদোর ইউরোপে ফেরার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে। ফলে দুজনের ক্যারিয়ারের ইউরোপ-অধ্যায়কে যদি এখন পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয়, তবে মেসির চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে থাকবেন রোনালদো।

ফোরফোরটুর তালিকায় তিনে থাকা বেকেনবাওয়ারও ইউরোপিয়ানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বে পাল্লা দেবেন রোনালদোর সঙ্গে। যে তিনজন ফুটবলার খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন, বেকেনবাওয়ার তাঁদের একজন। জার্মানির আইকনিক এই ফুটবলার পশ্চিম জার্মানির হয়ে ১৯৭৪ সালে অধিনায়ক হিসেবে এবং ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে তোলেন। জার্মানির হয়ে তিনি সব মিলিয়ে খেলেছেন ১০৩ ম্যাচ।

এ ছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ১৯৭০-এর দশকে হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান কাপও জিতেছেন বেকেনবাওয়ার। ক্যারিয়ারজুড়ে সাফল্যের মুকুটে দুর্দান্ত সব পালক যোগ করার পথে তিনি সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে বেকেনবাওয়ারের এত সব অর্জনের পরও সেরার তালিকায় রোনালদোর পেছনেই রেখেছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে হয়তো পরিসংখ্যানের সঙ্গে ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে তুলনায় ডিফেন্ডারদের প্রতি যে বৈষম্য, সেটিও একটি বড় কারণ।

সর্বশেষ যে খেলোয়াড়টির সঙ্গে রোনালদোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে, তিনি জিদান। রোনালদোর একসময়ের গুরু জিদান ইউরোপিয়ান ফুটবলে লম্বা সময় আধিপত্য বিস্তার করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ ও ইউরো জেতা জিদানের ইউরোপিয়ান সাফল্য অবশ্য আহামরি নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন একবার। ২০০১-০২ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে জেতা চ্যাম্পিয়নস লিগই তাঁর ইউরোপিয়ান মঞ্চে একমাত্র সাফল্য। এ ছাড়া জুভেন্টাসের হয়ে দুইবার ফাইনাল খেললেও জেতা হয়নি ট্রফি। ফলে সামগ্রিক বিবেচনায় ইউরোপিয়ান সাফল্যে রোনালদোর পেছনেই থাকতে হচ্ছে জিদানকে।

সব মিলিয়ে ইউরোপিয়ান মঞ্চে রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব নিরঙ্কুশ। সাফল্য, পরিসংখ্যান ও প্রভাব বিবেচনায় অতীতের কেউ কেউ রোনালদোর কাছাকাছি থাকলেও সমকক্ষ নন। এখন অদূর ভবিষ্যতে আর্লিং হলান্ড, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পে কিংবা লামিনে ইয়ামালরা রোনালদোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হল বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ নির্ধারণ ম্যাচ, দেখে নিন ফলাফল

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হল বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ নির্ধারণ ম্যাচ, দেখে নিন ফলাফল

৬ বছর পর ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের চেয়ে এই ম্যাচে ...

ব্যাটিংয়ে বিশাল ঝড় ২৮১ রান: নতুন হার্ড হিটার ব্যাটার খুজে পেল বিসিবি

ব্যাটিংয়ে বিশাল ঝড় ২৮১ রান: নতুন হার্ড হিটার ব্যাটার খুজে পেল বিসিবি

বাংলাদেশের ক্রিকেটে উদীয়মান নক্ষত্র হয়ে উঠছেন ২০ বছর বয়সী জিসান আলম। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার বিস্ফোরক ...

ফুটবল

নতুন চমক নিয়ে ২০৩৪ বিশ্বকাপের নাম ঘোষণা করলো ফিফা

নতুন চমক নিয়ে ২০৩৪ বিশ্বকাপের নাম ঘোষণা করলো ফিফা

আগেই বেশ কিছুটা নিশ্চিত ছিল যে, ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হবে সৌদি আরব। এবার ...

মুখোমুখি লড়াইয়ে নামবেন পুরোনো ‘শ'ত্রু’ নেইমার-এমবাপে

মুখোমুখি লড়াইয়ে নামবেন পুরোনো ‘শ'ত্রু’ নেইমার-এমবাপে

২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছাড়ার পর নেইমার জুনিয়র রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দেন। একই ...