গোপন খবর ফাঁস করল আমেরিকা ; হাসিনাকে চাপ না দিতে আমেরিকার কাছে তদবিতে ভারত
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছর আগে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ শেষ করতে ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন সরকারকে চাপ দিয়েছিল। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের কারারুদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করেছে। এর আগে বাংলাদেশি পুলিশ ইউনিট র্যাবকে নিষিদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটি কিছু লোকের ভিসা নিষিদ্ধ করেছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রশাসন বলেছিল, যারা গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করবে বা মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, বেশ কয়েকটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের সময়, ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিষয়ে তার গণতন্ত্রপন্থী বক্তৃতা কমানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারা বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারলে বাংলাদেশকে ইসলামী দলগুলোর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করতে পারে। এতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ভারত সরকারের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা মাথায় রেখে চিন্তাভাবনা করছেন, কিন্তু আমাদের জন্য সমস্যাগুলো অনেক অনেক বেশি গুরুতর । মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক কথোপকথন হয়েছিল যেখানে আমরা বলেছিলাম, এটি আমাদের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয়। আপনি আমাদের ততক্ষণ পর্যন্ত কৌশলগত অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন না, যতক্ষণ না আমরা কোনো কৌশলগত বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাই।’
শেষ পর্যন্ত, জো বাইডেন প্রশাসন সমালোচনার সুর অনেকটাই নরম করে এবং হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি স্থগিত করে। কিন্তু বিষয়টি বাংলাদেশের অনেককেই হতাশ করেছে। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিত বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ভারতীয় চাপের খুব একটা সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর কারফিউ অমান্য করে হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে যাওয়া শুরু করলে তিনি ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এ নিয়ে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন উভয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তারা বাংলাদেশকে ভুলভাবে ব্যবহার করেছে কি না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে সব সময় একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রাখতে হয়। কারণ এমন অনেক জায়গা আছে যেখানের পরিস্থিতি জটিল। সেখানে হয়তো আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে এমনভাবে কাজ করতে হয় যা আমেরিকান জনগণের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
গত জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে কীভাবে পরিচালনা করা যায় তা নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। তৎকালীন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা সহ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কেউ কেউ হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন, বিশেষ করে যেহেতু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নিয়ে মার্কিন বিদেশি নীতির প্রচার চালিয়েছিলেন। যদিও হাস এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন, হাসিনাকে আরও চাপে ফেললে হাস সহ মার্কিন কূটনীতিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের কিছু কর্মকর্তা ভারতের বিরোধিতা করার নেতিবাচক দিকটি বিবেচনা করেছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে দেখা করার সময়ে হাসিনার ওপর চাপ কমিয়ে আনার বিষয়ে আবেদন করেছিলেন। এমনকি প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন গত নভেম্বরে নয়াদিল্লিতে আসার সময়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও ওয়াশিংটন সফরের সময় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদাই ছিল আমাদের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা অনেক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে সেগুলো সম্পর্কে কথা বলেছি - তবে এটা বাস্তব ঘটনা যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ছিল এবং সেখানে অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের ও অন্যান্য দেশের স্বার্থ জড়িয়ে ছিল। আমাদের সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য একটি গঠনমূলক উপায় খুঁজে বের করার দরকার ছিল যেমন আমরা সব জায়গায় করি। সুতরাং আমাদের নীতিটি ছিল এই দুটি জিনিসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।’
গত সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তার অনেক প্রতিপক্ষকে জেলে বা আত্মগোপনে রেখে একতরফা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দাবি করেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা নির্বাচনী এ ফলাফলকে সমর্থন করেন। এতে বাংলাদেশের বিরোধীরা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেন। গত বছর, ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দেশ মালদ্বীপেও চীনপন্থী মোহাম্মদ মুইজু ইন্ডিয়া আউট প্রচারণা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় এই বছর ভারত-বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে। কারণ মোদির দাবি, তাঁর বিরোধীরা ভারতের ন্যায্য অঞ্চল শ্রীলঙ্কাকে সস্তায় দিয়ে দিয়েছে।
ঢাকায় ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব পালন করা সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিজ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করেছে। বিশেষত বাংলাদেশের ঘটনায় এটি অনেক স্পষ্ট
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কৌশল পরিবর্তন করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশে যে ক্ষমতায় আসবে তার সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে মোদি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেতাঁর শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। যদিও হাসিনাকে সমর্থন করার জন্য ভারতের সমালোচনা করেছিলেন ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্র ইউনূসকে সমর্থন করেছেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের বিরোধীদের নিয়ে তাদের অস্বস্তির কারণ আছে। ২০০০-এর মাঝামাঝি সময়ে হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাসনামলে, ইসলামিক জঙ্গিরা উত্তর-পূর্ব ভারতে আক্রমণ করার জন্য অস্ত্র পাচার করেছিল এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ভারতীয় ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপি শাসনের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে ভারত কেন হাসিনাকে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে এতটা অনড় ছিল।
ভারতীয় কর্মকর্তারা এখন সতর্ক করেছেন যে, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামি ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। ভারতীয় মিডিয়া হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনার নিয়ে প্রতিবেদন করছে। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি আশ্বস্ত করছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ থাকবে। বিএনপির সিনিয়র নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বলার চেষ্টা করেছি যে, আপনার সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখবেন না। ভারতের উদ্বেগ যাই হোক না কেন আমরা তা প্রশমিত করার চেষ্টা করেছি। অতীতকে বহন করা উভয় পক্ষের ক্ষেত্রেই বোকামি হবে।’
হাসিনা পদত্যাগ করার পর অভিযোগ ওঠে, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান মিলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তবে আমেরিকা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একজন প্রাক্তন সিনিয়র ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে, হাসিনাকে সমর্থন করা অর্থপূর্ণ, কিন্তু নয়াদিল্লি বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি। ঢাকা থেকে আসা প্রত্যেকেই একই প্রতিক্রিয়া জানাতো যে, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী অনুভূতি একটি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবুও আমরা মনে করতাম, দেশের প্রশাসনিক এবং সামরিক বাহিনীর ওপর তাঁর (হাসিনা ) সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম সরকারকে অস্থিতিশীল করার বারবার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তাই তিনি আবারও দেশ পরিচালনা করবেন। আসল কথা হলো, পুরো বাসায় আগুন লাগানোর জন্য শুধু একটা স্ফুলিঙ্গের প্রয়োজন ছিল।’
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- ‘মীর মুগ্ধ নামে কেউ মারা যায়নি’ কিংবা ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’
- ফারুকী আউট, আসিফ মাহাতাব স্যার ইন!
- চ্যাম্পিয়ন ট্রাফির আগে বিসিবির সভাপতি হতে পারেন মাশরাফি, ক্যাপ্টেন্সিতে ফিরতে পারেন তামিম!
- ‘তৃতীয় বি'শ্ব'যু*দ্ধ শুরু হয়ে গেছে’
- সেই তামিমকে অধিনায়ক করে শক্তিশালী দল ঘোষণা করলো বাংলাদেশ
- ব্রেকিং নিউজ ; জড়ো হচ্ছেন শত শত মানুষ, অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি, বন্ধ ইন্টারনেট!
- এই মাত্র পাওয়া ; জড়ো হচ্ছেন শত শত মানুষ, অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি, বন্ধ ইন্টারনেট!
- আজ ১৮/১১/২০২৪ তারিখে, দেখে নিন আজ ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট এবং ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত
- এই মাত্র পাওয়া : মারা গেলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক
- অবশেষে কেরানীগঞ্জ থেকে আটক ওবায়দুল কাদেরের
- আইপিএল ২০২৫ নিলামে রেকর্ড গড়লেন তাসকিন ও নাহিদ রানা, দেখুন সাকিব-মুস্তাফিজের অবস্থান
- আইপিএল নিলামে ইতিহাস গড়ে ৪ কোটি রুপি দামে যে দলে মুস্তাফিজ, দেখে নিন নাহিদ-তাসকিনের অবস্থান
- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ, দেখে নিন বাংলাদেশের অবস্থান
- ১ গোলে শেষ হল, আর্জেন্টিনা বনাম পেরু বাঁচা মরার লড়াই
- আইপিএলে সাকিব-মুস্তাফিজ এক দলে, তাসকিনের ঠিকানা কলকাতা নাইট রাইডার্স!