‘তেমন কিছু না, যা করছি, সেটাই ধরে রাখতে চাই’

প্রশ্নঃ ভারত সিরিজকে তো ‘মিরাজের সিরিজ’ বলা হচ্ছে। শুনতে কেমন লাগে?
মেহেদী হাসান মিরাজ: আমার জন্য সিরিজটা ছিল স্বপ্নের মতো। ওয়ানডে সিরিজটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাত বছর আগের ভারত সিরিজটা যেমন মোস্তাফিজের সিরিজ ছিল, এবার আমি পারফর্ম করেছি। অবশ্যই ভালো লাগছে। আমি চিন্তাও করিনি, এমন কিছু হতে পারে। আপনি দলের জন্য খেলার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামেন, আর সে চেষ্টায় এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটে যায়। আমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।
প্রশ্নঃমোস্তাফিজকে নিয়ে আলোচনায় ২০১৫ সালের ভারত সিরিজের কথা বারবার উঠে আসে। এই সিরিজটাও কি আপনার ক্যারিয়ারে সে রকমই হতে যাচ্ছে?
মিরাজ: সেটা জানি না। তবে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটা জেতার পর দলের মধ্যে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল। এমন ম্যাচ জিতে গেলে দলের আবহ পাল্টে যায়। প্রথম ম্যাচটা আমাদের দলের আবহ পাল্টে দেয়। দ্বিতীয় ম্যাচটাও আমরা এমন একটা জায়গায় নিতে চেয়েছিলাম, যেখানে আমরা ওদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি। শেষ পর্যন্ত আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, জিতেছিও।
প্রশ্নঃভারতের বিপক্ষে অনেক ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরেছে। এবার সে রকমই দুটি ম্যাচ জেতা নিশ্চয়ই স্বস্তির...
মিরাজ: যেকোনো ম্যাচেই এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে হয়, যেখান থেকে জেতা সম্ভব। সেখান থেকে জিততেও পারেন, হারতেও পারেন। কিন্তু যদি ধারাবাহিকভাবে জেতার অবস্থায় যেতে পারেন, তাহলে পাঁচ ম্যাচে হয়তো কিছু ম্যাচ হারবেন, কিছু জিতবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে সাফল্যের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশের বেশি থাকবে। ভারতের সঙ্গে প্রায় প্রতি ম্যাচেই আমাদের পরিস্থিতিটা এ রকম থাকে। এটা আমাদের ক্রিকেটের বিরাট উন্নতি।
প্রশ্নঃ ক্রিকেটার হিসেবে গত দুই বছরে নিজের উন্নতিটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মিরাজ: এক-দুই দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য আসে না। মানসিকভাবে তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। আমি ছয় বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। আমার শুরুর দিকের ভাবনা আর এখনকার ভাবনায় আকাশ–পাতাল পার্থক্য। প্রথম প্রথম টিকে থাকাটাই ছিল বিরাট ব্যাপার। একটা সুবিধা হয়েছে, আমি শুরুর দিকে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত ছিলাম। এরপর একটা সময় পর ওয়ানডে খেলানো হয়েছে। এতে আমার ভিত্তি মজবুত হয়েছে। আমাকে যদি দ্রুত তিন সংস্করণে খেলিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে চাপে পড়ে যেতাম। আমি যত খেলেছি, তত মাথা খুলেছে। আমার যেসব জায়গায় উন্নতি দরকার, সেসব জায়গায় উন্নতি করেছি। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।
প্রশ্নঃ সবাই তো আপনার লড়াই করার মানসিকতারই বেশি প্রশংসা করে…
মিরাজ: শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানসিকভাবে শক্ত থাকলে সহজে বিপদ–মুক্ত হওয়া যায়। এটা এক দিনে তৈরি হয় না। একটা সময় পর মাসল মেমোরি তৈরি হয়। মানুষের জীবনের সবকিছুর ন্যাচারাল রিঅ্যাকশনই নেগেটিভ। পজিটিভ কিছু নেই বললেই চলে। কিন্তু পজিটিভ ভাবনাটাকে নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হয়। নিজেকে সব সময় পজিটিভ ভাবনায় ডুবিয়ে রাখতে হয়। নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলতে হবে। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিলে একটা সময় পর মাসল মেমোরি নেগেটিভ থেকে পজিটিভ হতে থাকে। তখন আপনি ভালো ফল পেতে শুরু করবেন।
প্রশ্নঃ দু-তিন বছর আগেও কি আপনার চিন্তাভাবনা এমন ছিল?
মিরাজ: না, সেটাই বললাম। নিজের ভাবনাটাকে এভাবে গড়ে তুলতে সময় লেগেছে। উপমহাদেশের সংস্কৃতিটাই এমন যে এসব আলোচনার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় অনেক দেরিতে। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এই শিক্ষাটা পাই। আমি যে জিনিসটা পাঁচ বছর খেলার পর শিখেছি, বাইরের দেশের ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেই এসব জেনে। সবকিছুই মানসিক। এটা ঠিক থাকলে আপনি সফল হবেনই।
ভারত সিরিজে বিরাট কোহলির সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছের। শুধু কোহলি নন, আপনি অন্য দলের অনেক বড় ক্রিকেটারের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন। এটা কেন?
মিরাজ: প্রথমত বড় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। সেটা যে সব সময় ক্রিকেটীয় হতে হবে, তা নয়। জীবন নিয়েও কথা হতে পারে। আপনি ক্রিকেট কত দিন খেলবেন? ১০-১৫ বছর? এরপরও তো জীবন থেমে থাকবে না। যাঁরা বড় ক্রিকেটার, তাঁরা তো এমনিতেই বড় ক্রিকেটার হন না। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
প্রশ্নঃ ক্রিকেটই সবকিছু নয়, এই ভাবনাটা কখন প্রথম মাথায় এসেছে?
মিরাজ: তিন-চার বছর আগেও অনেক আবেগ কাজ করত। ভালো খেললে খুব রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। বাজে খেললে খারাপ লাগত। একটা পর্যায়ে এসে বুঝতে পারলাম, ক্রিকেটে বেশি ডুবে গেলে এই মজার খেলাটাই চাপে পরিণত নয়। হ্যাঁ, ক্রিকেট আমি ভালোবাসি। আমি পেশাদার ক্রিকেটার। কিন্তু ক্রিকেটই সব নয়। ক্রিকেটে বড় কিছু করতে না পারলেও আমার সব শেষ হয়ে যাবে না। এই ভাবনা আমাকে নির্ভার হতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্নঃ নিজের সেরা ক্রিকেটটা তাহলে এই মানসিকতা থেকেই বেরিয়ে আসছে…
মিরাজ: ঠিক তাই। এভাবে চিন্তা করলে সাফল্যকেও সঠিক মূল্য দিতে পারবেন। এই যেমন আমি ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলেছি। আমি যদি এখন মনে করি যে বিশাল কিছু করে ফেলেছি, তাহলেই শেষ। ভালো লাগা আছে অবশ্যই। কিন্তু দিন শেষে এটাই আমার কাজ। এর জন্যই আমাকে দলে নেওয়া হয়েছে। আরও অনেক কিছু অর্জন করা বাকি। এটা তো মাত্র শুরু। যেদিন বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ জিততে পারব সেদিন হয়তো বলা যাবে যে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চটা এনে দিতে পেরেছি।
প্রশ্নঃ আপনি এখন দলের ধারাবাহিক পারফরমার, অনুভূতিটা কেমন?
মিরাজ: আমার ছেলে জন্ম নেওয়ার পর পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে। বাবা হওয়ার যে অনুভূতি, দায়িত্ব—এসব আমাকে পাল্টে দিয়েছে। গত তিনটা বছর আমার জীবনে বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। ২০২০ সালে আমার ছেলে হলো, এরপর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, ১০০ টেস্ট উইকেট। এ বছরও ভালোই কেটেছে। কিন্তু আমি সব সময় ভালো সময়কেই বেশি ভয় পাই। কারণ, জানি যে এই সময়টা একটা পর্যায়ে এসে শেষ হবে। আর খারাপ সময়ে আমি বেশি সাহসী থাকি, কারণ আমি জানি যে এটারও শেষ আছে।
প্রশ্নঃ এ বছর আপনিই তিন সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৫৯টি)। ব্যাটিংয়েও বেশ কিছু অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছেন। বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের উন্নতিটাকে কীভাবে দেখেন?
মিরাজ: দুর্বলতাগুলো নিয়ে ধরে ধরে কাজ করে উন্নতি করেছি। সামনেও করে যাব। ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে আমি খুশি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার আরও ভালো করার সুযোগ আছে। ব্যাটিং অর্ডারে আমি ৪ থেকে ৬ নম্বরের মধ্যেও যেতে পারি। সে জন্য কোন জায়গায় উন্নতি দরকার, সেটা আমার জানা। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্নঃ ২০২৩ সাল নিয়ে কোনো প্রত্যাশা?
মিরাজ: তেমন কিছু না। যা করছি, সেটাই ধরে রাখতে চাই। আর যেহেতু বিশ্বকাপের বছর, আমরা বেশ অভিজ্ঞ একটা দল নিয়ে বিশ্বকাপে যাব, ভালো করার একটা প্রত্যাশা থাকবে। যারা দলে থাকতে পারে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই দু–একটা বিশ্বকাপ খেলেছে। আর অভিজ্ঞরা তো তিন–চারটা খেলেছেন। এখন সবাই এক হয়ে খেলাটাই আসল।
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা চালু
- ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বেড়িয়ে এল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য
- ৮ বছরের শিশু ধ/র্ষণে বোনের স্বামী ও শ্বশুর আটক, বেড়িয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
- দুবাইয়ে দুর্ঘটনায় সংগীত শিল্পী মমতাজ নিহত, সত্যতা নিয়ে যা জানা গেল
- ২০২৫ সালে সৌদি প্রবাসীদের আকামা নবায়নের জন্য নতুন আইন ঘোষণা
- ভূমিকম্পে ঢাকায় তাৎক্ষণিক ভাবে মারা যেতে পারে ২ লাখ মানুষ
- চিরতরে হাসিনার হাসি বন্ধ করল জাতিসংঘ
- তীব্র কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আশঙ্কা
- হঠাৎ ফেসবুকে মাশরাফির আবেগঘন বার্তা মুহূর্তেই ভাইরাল
- ৪০ বছর পর বিশাল বড় সুখবর পেলেন শিক্ষকরা
- মাগুরায় আলোচিত ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের শুনানি হল গভীর রাতে; রায় নিয়ে যা জানা গেল
- মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে শেখ হাসিনার গোপন বৈঠকে: যা জানা গেল
- যদি ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা ধূলিস্যাৎ না হতো, তবে ৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম কেমন হতো
- মাগুরার আছিয়ার বোনের মুখ থেকে সত্যিটা শোনেন (ভিডিওসহ)
- কমে গেল ডলারের বিনিময় হার (০৫ মার্চ)